করোনাকালে অর্থব্যয়ে আরও সাশ্রয়ী হতে চায় সরকার। এর অংশ হিসেবে রাষ্ট্রীয় কেনাকাটায় মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সোমবার এক পরিপত্রে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি কেনাকাটায় সরকারি ক্রয় আইন (পিপিএ) ও সরকারি ক্রয় বিধিমালা (পিপিআর) অনুসরণ এবং কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে, দেশের চলমান করোনাজনিত অভিঘাত মোকাবেলায় স্বাস্থ্যখাত, সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। 

এ প্রেক্ষিতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের কেনাকাটার বিষয়ে আরও মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। এছাড়া সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পিপিএ ও পিপিআর যথাযথভাবে অনুসরণ ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে আশানুরূপ রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। 

আবার করোনার প্রভাব মোকাবেলা করে অর্থনীতি যাতে ঠিক থাকে সেজন্য ব্যয় করতে হচ্ছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও ব্যবসাখাতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সমস্যায় পড়া সাধারণ মানুষকে নগদ ও খাদ্য সহায়তা দিতে হচ্ছে। 

এ অবস্থায় সরকারের ব্যয় যতটা বেড়েছে, সে অনুযায়ী আয় বাড়েনি। এজন্য বিভিন্ন উপায়ে খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে।এর আগে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন কোনো পূর্ত কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য গত ২৬ এপ্রিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যাতে নির্মাণ ও স্থাপনা সংক্রান্ত নতুন কোনো পূর্ত কাজের কার্যাদেশ না দেয় সে বিষয়ে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

এর আগে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় কমানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করা যাবে বলে জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়।চলতি অর্থবছরের শুরুতে করোনার প্রভাব মোকাবিলা ও আশানুরূপ রাজস্ব আয় না হওয়ায় ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি নেয় সরকার। বার্ষিক উন্নয়সূচিতে থাকা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ ছাড় বন্ধ রাখা হয়। 

প্রথমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করার নির্দেশনা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। যা পরে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ করা হয়েছে। 

এছাড়া উন্নয়ন ও পরিচালন বাজেটের আওতায় গাড়ি কেনাও বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, বিদেশ ভ্রমণও বন্ধ রয়েছে। অর্থবছরের শুরুতে এডিপি বাস্তবায়নে ধীর গতি ছিল। 

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বাস্তবায়ন কিছুটা গতি পায়। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ওই গতি আরও ধীর হয়ে গেছে।চলতি অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন কাজে (এডিপি) সরকার ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। যা সংশোধন করে এক লাখ ৯৭ হাজার টাকা করা হয়। 

কিন্তু এই পরিমান উন্নয়ন কাজের জন্যও প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এনবিআর মোট এক লাখ ৯৫ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে। 

গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহে ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেলেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব সংগ্রহ হচ্ছে না। 

এই সময়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ কম হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথমত এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। 

দ্বিতীয়ত করোনার কারণে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব নয়।