ভারতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনা (কোভিড-১৯)।  মৃতু্যর মিছিল থামছে না। এর মধ্যে আবার দেখা দিয়েছে নতুন আতঙ্ক। 

যারা করোনা থেকে সেরে উঠছেন তারা আবার অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন। মিউকোরমাইকোসিস বা ব্লাক ফাঙ্গাস নামে একরকম ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে তারা অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন। 

ফুসফুস পর্যন্ত এই ব্লাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে জীবনহানীর মতো ভয়াবহ বিপদ হতে পারে।বিরল এই ছত্রাকের সংক্রমণ খুবই মারাত্মক যা নাক, চোখ এবং কখনও কখনও মস্তিষ্কেও আক্রমণ করে। 

ফলে জীবন বাঁচাতে রোগীর চোখ কেটে ফেলে দিতে হচ্ছে।চিকিৎসকরা বলছেন, মিউকোরমাইকোসিস খুবই বিরল একটা সংক্রমণ। 

মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার ও পচন ধরা ফল- শাকসবজিতে। এটা মাটি ও বাতাসে এমনিতেই বিদ্যমান থাকে। এমনকি নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটা স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে। 

ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা এইচআইভি/এইডস যাদের আছে, কিংবা কোনো রোগের কারণে যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম এই মিউকোর থেকে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।মিউকোরমাইকোসিস থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা ৫০%। তাদের ধারণা স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকে এই সংক্রমণ শুরু হতে পারে। 

কোভিড-১৯এ গুরুতরভাবে আক্রান্তদের চিকিৎসায় তাদের জীবন বাঁচাতে এখন স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে।স্টেরয়েড কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। করোনাভাইরাসের জীবাণুর সাথে লড়াই করতে গিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে যেসব ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি থামানোর জন্যও ডাক্তাররা কোভিডের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করেন।কিন্তু এই স্টেরয়েডের ব্যবহার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। 

ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি ডায়াবেটিস নেই এমন কোভিড আক্রান্তদের শরীরের রক্তে শর্করার (ব্লাড সুগার) মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণ ঘটছে।

সংক্রমিত কি না, কীভাবে বুঝবেন?

চিকিৎসকরা বলছেন, বেশিরভাগ রোগীই তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন দেরিতে। যখন তারা দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেন তখন আসেন। 

এ পর্যায়ে ডাক্তারের অস্ত্রোপচার করে চোখ ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। কারণ, ছত্রাকের মস্তিষ্কে আক্রমণ ঠেকাতে চোখ বাদ দেওয়া ছাড়া তখন বিকল্প থাকে না।ভারতের ডাক্তাররা বলছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীরা দুচোখেরই দৃষ্টি হারাচ্ছেন। 

কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়ানো রুখতে রোগীর চোয়ালের হাড়ও কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। তবে সেগুলো একেবারে মারাত্মক সংক্রমণের ক্ষেত্রে।ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য শিরার মধ্যে ইঞ্জেকশন দেওয়ার ওষুধের দাম ভারতীয় মুদ্রায় এক ডোজ ৩,৫০০ রুপি। 

আর রোগীকে এই ওষুধ দিতে হবে আট সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন। এটাই এই রোগের চিকিৎসায় একমাত্র কার্যকর ওষুধ।

প্রতিরোধ করার উপায়?

মুম্বাইয়ের ডায়াবেটিসের চিকিৎসক ডা. রাহুল বক্সি বলেছেন, এই ছত্রাক সংক্রমণ এড়ানো একমাত্র সম্ভব কোভিড-১৯এর রোগীর চিকিৎসার সময় এবং তার সুস্থ হয়ে ওঠার সময় যদি নিশ্চিত করা যায় তাকে সঠিক পরিমাণ স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে, সঠিক সময় ধরে।তিনি বলেন, গত বছর তিনি ৮০০ জন ডায়াবেটিক কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা করেছেন এবং তাদের কেউ কোভিড পরবর্তী ছত্রাক সংক্রমণের শিকার হননি। 

রোগী সুস্থ হবার পর বা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর তার রক্তে শর্করার মাত্রা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা খুবই জরুরি।