করোনাভাইরাসের কারণে ছন্দপতন হলেও জীবন চলছে নতুন বাস্তবতাকে সঙ্গে করেই। মহামারির মধ্যেই কড়া নাড়ছে ঈদ। 

নিত্যপণ্যের সঙ্গে জামা-জুতাসহ অনেক ফ্যাশন পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। তবে চাইলেও একাধিক মার্কেট ঘুরে প্রিয়জনের জন্য ঈদ উপহারের কেনাকাটা করার সুযোগ নেই। 

স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ নিজের ও পরিবারের সুরক্ষায় কেনাকাটা সারতে ঢুঁ মারছেন ভার্চুয়াল মার্কেটপ্লেসে।বাংলাদেশে কি অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে? এমন প্রশ্নে অনলাইন বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা জানাচ্ছেন, শুধু বাড়ছে না, ধারণার চাইতেও বেশি হারে বাড়ছে। 

ক্রেতার ক্রয় চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এক বছর আগের তুলনায় বিভিন্ন ব্র্যান্ড শপের অনলাইন বিক্রি ৫ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। 

এ কারণে কোনো পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট পণ্যের ক্রয় আদেশ নিয়েও ডেলিভারি করতে ব্যর্থ হচ্ছে।গত বছরের রোজার ঈদের আগে দেশে করোনাভাইরাস হানা দেওয়ায় কেনাকাটার চিন্তা বাদ দিয়েছিলেন। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর অনলাইনে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেন।অনলাইনে থ্রিপিস, শাড়ি থেকে প্রসাধনসামগ্রী সবকিছু বিক্রি হচ্ছে। 

নারী উদ্যোক্তারা ফেসবুক লাইভে এসে পণ্যের প্রচার করছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে সময়মতো ডেলিভারি পাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। যেমন সামিমাই বললেন, 'দুই সপ্তাহ আগে অগ্রিম টাকা দিয়ে শীর্ষ এক ব্র্যান্ডের জুতার অর্ডার করেও পণ্য বুঝে পাইনি। 

অর্ডারের সময় স্টক আছে জানালেও এখন কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের স্টক ফুরিয়ে গেছে। এসব সমস্যা না থাকলে অনলাইনে কেনাকাটা আরও বাড়ত।মোহাম্মদপুরের বায়তুল আমান সোসাইটির বাসিন্দা অনলাইনে নিয়মিত পণ্য কেনেন। তিনি বলেন, বাজারে গেলে ভিড় সামলাতেই হয়, তা ছাড়া আছে করোনা সংক্রমণের ভয়। অনলাইন কেনাকাটায় এ ভয় নেই। 

এখানে সময়ও বাঁচে, অনেক ছাড়ও পাওয়া যায়।এ নিয়ে কথা হলো বাটার মার্কেটিং ম্যানেজার তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অনলাইনে কেনাকাটা বাড়বে- এমন আগাম ধারণা তাদের ছিল। কিন্তু ধারণার তুলনায় চাহিদা অনেক বেড়েছে। 

এতে বেশি জনপ্রিয় কিছু পণ্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।এ বছরের প্রথম তিন মাসেই গত বছরের বিক্রি ছাড়িয়ে গেছে, যদিও ঈদের বিক্রি এখনও শেষ হয়নি। ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ায় অনলাইনে বাটা বিডি শপ ছাড়াও 'বাটা চ্যাট শপ' নামে নতুন বিক্রয় সেবা চালু হয়েছে।ঈদ কেনাকাটায় মানুষের আগ্রহ বেশি নানা ধরনের পোশাকে। 

তাই ব্র্যান্ড শপগুলোতে বিক্রিও বেড়েছে বহুগুণ। আড়ংয়ের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আশরাফুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালে যেখানে প্রতিদিন ১৫০-২০০টি অর্ডার পাওয়া গিয়েছিল, এখন তা বেড়ে এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত অর্ডার মিলছে। 

শুধু দেশের মধ্যে নয়; যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া থেকে অনলাইনে অর্ডার আসছে।গত এক বছরে অনলাইন বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। মানুষের আগ্রহ থাকায় ক্রেতাবান্ধব ওয়েবসাইট উন্নয়ন করার পাশাপাশি অ্যাপও চালু করা হয়েছে। 

বিদেশ থেকে ১০০ ডলার বা তার বেশি মূল্যের পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের ফ্রি হোম ডেলিভারি সুবিধা দিচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান।আড়ং  জানান, উন্নত বিশ্বে ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ ব্যবস্থা যতটা শক্তিশালী, বাংলাদেশে এখনও ততটা নয়। তার ওপর নানা ইস্যুতে আস্থার সংকট আছে বলেও মত দেন তিনি।

অনলাইন বাজারের ব্যাপ্তি সীমাহীন। পোশাক থেকে প্রসাধনীর মতো সব পণ্য কিনতে এখন শহরে আসার প্রয়োজন নেই। এখন গ্রামে বসেই পাচ্ছেন ঢাকার সব ব্র্যান্ড শপের পণ্য। 

২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে।ব্যবসায়ীরা জানান, কিছু মানুষ মহামারির ভয়াবহতার বিষয়ে এখনও উদাসীন হলেও অনেক মানুষই সতর্ক। 

ঈদের জন্য শিশুসন্তান থেকে প্রিয়জনের জন্য পছন্দের পোশাকসহ অন্যান্য উপহারসামগ্রী কিনতে চান, তবে উপহার কিনতে গিয়ে মৃত্যুকে কোনোভাবে আলিঙ্গন করতে চান না। স্বাস্থ্য সচেতন এ মানুষের জন্য নানা কার্ডের পাশাপাশি ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধায় অনলাইন বিক্রির সুবিধা ব্যাপকভাবে চালু করেছেন। 

অনলাইন কেনাকাটা শুধু হাল ফ্যাশন পণ্যে সীমাবদ্ধ নেই। কাঁচাবাজার থেকে ফলমূল কিংবা মাছ ও মাংস- সবই মিলছে অনলাইনে।বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ই-কমার্স সাইট থেকে প্রায় ২০ লাখ ৩৭ হাজার অর্ডারের বিপরীতে ৬৬৩ কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়েছে। 

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১১ লাখ ৪৩ হাজার অর্ডারের বিপরীতে বিক্রি ছিল ২৪৭ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এখানে বিক্রি ছিল ১৪৫ কোটি টাকার।তবে মুদি ও পচনশীল পণ্যের কেনাবেচা এখনও মোট বাজার চাহিদার চেয়ে খুবই কম বলে জানান সুপারশপ ইউনিমার্টের সিইও মর্তুজা জামান। তিনি বলেন, মুদি পণ্য বা মাছ-মাংস ক্রেতারা দেখে ও যাচাই করে কিনতে অভ্যস্ত। 

তারপরও লকডাউনে অনলাইন অর্ডার বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে আউটলেটের মোট বিক্রির তুলনায় অনলাইন অর্ডার ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে থাকলেও লকডাউনে তা ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।চাহিদার তুলনায় অনলাইন কেনাকাটা কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অর্ডার অনুযায়ী মানসম্পন্ন পণ্য পাবেন কিনা, তা নিয়ে ক্রেতারা কিছুটা চিন্তিত থাকেন। 

তা ছাড়া সময়মতো ডেলিভারি নিয়ে অনেকের অভিযোগ থাকে।জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মহামারি থেকে বাঁচতে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। 

ঘরে থাকাটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ, বাজার ও শপিংমলে ভিড় এড়ানোর স্বার্থে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা যেন অনলাইনেই কেনাকাটা করেন।