ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

রাজনৈতিক সীমানা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভৌত বাধা হয়ে উঠা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, আমরা এমন একটি অঞ্চলে রয়েছি যা চালু হওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হয়ে আছে এবং যেখানে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য তার সম্ভাবনার থেকে অনেক নিচে। 

আমি বিশ্বাস করি যে, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ভৌত বাধা হয়ে উঠা উচিত নয়।মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। 

এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার মৈত্রী সেতু ভারতের ত্রিপুরাকে বাংলাদেশের রামগড়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে।মৈত্রী সেতু শুধু ভারতের সঙ্গে নয় নেপাল, ভুটানের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্যকে আরও সহজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, আমরা আশা করি আজ আমরা যে সেতুটি উদ্বোধন করছি তা কেবল ভারত নয়, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও বাংলাদেশকে স্বাচ্ছন্দ্যে বাণিজ্য করতে সহায়তা করবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, আমরা ভারতকে কানেকটিভিটি দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন যুগ তৈরি করছি। 

আমি মনে করি মৈত্রী সেতু কেবল আমাদের দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধনই তৈরি করবে না, পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।তিনি বলেন, এটি এমন সময় হলো যখন আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ তম বছর উদযাপন করছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফেনী মৈত্রী সেতু ত্রিপুরা এবং আশপাশের ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি করবে বলে আশা করছি। 

আমরা আশা করি, মৈত্রী সেতুর আশপাশের এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের জীবন-জীবিকার উন্নতিতেও অবদান রাখবে।ভৌগলিক অবস্থানের পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির গতিপথ বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রতিবেশী করে তুলেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক টেক্সটাইল শিল্পের অন্যতম নেতা হিসেবে আমরা আমাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র পথ তৈরি করেছি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে কানেকটিভিটির কেন্দ্র হিসেবে এর অবস্থানগত সুবিধা সর্বোচ্চ করতে প্রস্তুত। 

আমরা বিশ্বাস করি ভারতের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি আঞ্চলিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।২০১০ সালে ত্রিপুরার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ফেনী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে একটি প্রস্তাব দেন।আমরা অনুরোধটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করি। 

তারপর থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় পক্ষকে সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করে আসছে-বলেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, ১০ বছর পর আজ এই সেতুটি একটি বাস্তবতা। এই সেতু উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি বাণিজ্য লাইফলাইন হবে। 

পণ্য পরিবহনের জন্য এরইমধ্যে বাংলাদেশ ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। ফেনী সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বের ল্যান্ডলকড রাজ্যগুলো বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারে।এর আগে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে আগরতলার নিকটতম সমুদ্রবন্দর ছিল কলকাতা। 

বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলার নিকটতম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও কম।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমরা একসঙ্গে সমৃদ্ধ অঞ্চল তৈরি করছি। 

আমি ফেনী মৈত্রী সেতুর সফলতা কামনা করছি।এ সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরার সাবরুমসহ একাধিক অবকাঠামো প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।