মিয়ানমারে একদিনে সবেচেয়ে বেশি প্রাণহানির পরে দেশটির কয়েকটি জেলার অংশবিশেষে ‘মার্শাল ল’ জারি করা হয়েছে।দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের লাইংথাইয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের কয়েকটি অংশে মার্শাল ল জারি করা হয়েছে।অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর রোববারই দেশটিতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। 

এদিন দেশটির বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণ গেছে অন্তত ৫৩ জন অভ্যুত্থানবিরোধীর। এ ছাড়া সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন।এ ঘটনার পরদিন সোমবারও সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মিয়ানমারবাসী। এই বিক্ষোভেও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়েছে। 

এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুইজন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দেশটির আটক গণতান্ত্রিক নেতা অং সান সু চির সমর্থকরা মান্দালয়ে এবং কেন্দ্রীয় শহর মইঙ্গিয়ানের প্রধান শহরে আবার মিছিল করেন। এই মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। মইঙ্গিয়ানে ১৮ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, পুলিশ আমাদের উপর গুলি চালিয়েছে। একটি মেয়ের মাথায় গুলি লেগেছে এবং একটি ছেলের মুখে গুলি লেগেছে। আমি শুনেছি তারা মারা গেছেন।রোববার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ইয়াঙ্গুনের লাইংথাইয়া শিল্প এলাকাতেই নিহত হন ৩৭ জন। 

এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে আরও ১৬ জন বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান।লাইংথাইয়া শিল্প এলাকায় চীনা অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি কারখানায় রোববার আগুন দেওয়া হয়। ওই এলাকা ধোয়ায় ঢেকে যেতে শুরু করলে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সেখানে ৩৭ জন নিহত হয়। যদিও কারখানা পোড়ানোর ঘটনায় দায় স্বীকার করেনি কোনো পক্ষ।এদিকে ঘটনার পর মিয়ানমারে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা লাইংথাইয়ায় পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ করলে অনেক চীনা কর্মী আহত হয় ও আটকে পড়ে। 

এ অবস্থায় চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের সম্পদ ও নাগরিকদের রক্ষায় মিয়ানমারের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়।প্রসঙ্গত, চীনকে মিয়ানমারে ক্ষমতা দখলকারী জান্তা সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবেই দেখছে বিক্ষোভকারীরা। 

এ কারণে অভ্যুত্থানের পর থেকে দানা বেঁধে ওঠা বিক্ষোভে ব্যাপক চীনবিরোধী মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে।এদিকে মিয়ানমারের রাজনৈতিক বন্দিদের সহায়তায় কাজ করা অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিসনারসের (এএপিপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আরও ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এদের বাইরে এক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন।গত ১ ফেব্রুয়ারি এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। 

এরপর থেকে দেশটিতে চলছে অভ্যু্ত্থানবিরোধী বিক্ষোভ। এএপিপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলমান এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ১৪০ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত শনিবার পর্যন্ত আটক করা হয়েছে ২ হাজার ১৫০ জন।