অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান আর নেই। শনিবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর সূত্রাপুরে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পাঁচ শতাধিক সিনেমার এ অভিনেতার মরদেহ এফডিসিতে নেওয়া হবে না।কারণ, জীবদ্দশায় বাংলা সিনেমার প্রখ্যাত এই অভিনেতা অনুরোধ করে গেছেন- মৃত্যুর পর তার মরদেহ যেন এফডিসিতে না নেওয়া হয়। 

মূলত, রাগ এবং অভিমান থেকেই বরেণ্য অভিনেতা এমন অনুরোধ করে গেছেন বলে জানান এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনী জামান।তিনি জানান, ‌‘খুবই অভিমানী লোক ছিলেন এটিএম। তিনি যখন অসুস্থ হয়ে বাসায় পড়ে ছিলেন, সিনেমার কোনো মানুষ তাকে একবার দেখতেও  আসেনি। হাসপাতালে ভর্তি হলেও সিনেমার কেউ দেখতে আসেনি। খোঁজ নেননি। 

অথচ সারা জীবন অভিনয়ের পেছনেই সময় দিয়েছেন তিনি।জীবনের শেষ সময়ে এসে কী প্রতিদান পেলেন সহকর্মীদের কাছ থেকে? এই অভিমান আর ক্ষোভ থেকেই তিনি আমাকে অনুরোধ করে গেছেন- মৃত্যুর পর তার মরদেহ যেন এফডিসিতে না নেওয়া হয়।শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য এর আগে গত বুধবার সকালে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এটিএম শামসুজ্জামানকে। 

হাসপাতালে ডা. আতাউর রহমান খানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত জনপ্রিয় এ অভিনেতা। পরে শুক্রবার থাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। শনিবার সকালে জানা যায় তিনি আর বেঁচে নেই।এদিকে পুরান ঢাকার নারিন্দা মসজিদে জানাযা শেষে বাদ আসর জুরাইন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে এটিএম শামসুজ্জামানের পরিবার।আবু তাহের মোহাম্মাদ (এটিএম) শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর বিষকন্যা সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন।অভিনেতা হিসেবে তার অভিষেক হয় ১৯৬৫ সালে। 

১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করে তিনি আলোচনায় আসেন।কিংবদন্তি এ কমেডিয়ান ও খল অভিনেতা ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। 

১৯৯৯ সালে ‘ম্যাডাম ফুলি’ সিনেমায় কমেডিয়ান চরিত্রে, ২০০১ সালে ‘চুড়িওয়ালা’, ২০০৯ সালে ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ২০১২ সালে ‘চোরাবালি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য এবং ২০১৭ সালে ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন এই অভিনেতা।বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।