আলজাজিরার সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনের অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্ত চায় বিএনপি। দলটি বলেছে, এ ব্যাপারে সাতটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘকে নিজস্ব পদ্ধতিতে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে; বিএনপি ওই আহ্বানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করছে।বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।বিএনপি নেতা বলেন, আলজাজিরার প্রতিবেদন এ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুঃশাসনের এক বিশাল ক্যানভাসের ক্ষুদ্রচিত্র মাত্র। রাষ্ট্রক্ষমতার চরম অপব্যবহার ও মাফিয়া সংস্কৃতির এক অতি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। রাষ্ট্রযন্ত্রকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতার দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখার ভয়ানক প্রক্রিয়ার এবং লাগামহীন সাগর সমান দুর্নীতির খুব অল্পই এ প্রতিবেদনে উঠেছে। 

দেশের চলমান শ্বাসরুদ্ধকর বাস্তবতায় জাতিসংঘকে এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি।খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, একদিকে সরকার আলজাজিরার পুরো প্রতিবেদনকেই 'মিথ্যা ও বানোয়াট' বলে নাকচ করে দিয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ যে তদন্ত আহ্বান করেছে, সে ব্যাপারে দায়সারাভাবে বলেছে, তদন্ত হতেই পারে, এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই। 

আবার আলজাজিরার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সেখানে তথ্যগত ভুল আছে, সেগুলো তুলে ধরা হবে এবং আমরা মামলা করব।তিনি অভিযোগ করেন, সরকার প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু উহ্য রেখে খণ্ডিত তথ্য অথবা প্রান্তিক বিষয়ের ওপর ভর করে 'ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব' প্রকাশ করে চলছে। 

যদিও তথ্যচিত্রটি সম্প্রচারের আগে অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, যা তারা উপেক্ষা করেছে।খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের গর্ব। এ প্রতিরক্ষা বাহিনী সবসময়ই জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দুর্নীতি বা নৈতিকতাবিবর্জিত কর্মের কারণে রাষ্ট্রের সংবেদনশীল এই মহান প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। 

আলজাজিরার প্রতিবেদনে প্রচারিত অভিযোগগুলোর অনেক বিষয় নিঃসন্দেহে প্রচলিত আইন অনুযায়ী গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। দেশে ও বিদেশে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সংবাদের কারণে এসব অভিযোগ আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধের রূপ পেয়েছে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ শান্তি মিশনের জন্য হাঙ্গেরি থেকে আড়িপাতার যন্ত্রপাতি আমদানির কথা ইতোমধ্যেই স্বীকার করেছে। যদিও জাতিসংঘ পরিস্কার ভাষায় তা নাকচ করে দিয়েছে। 

এখন জনমনে প্রশ্ন, অবৈধভাবে আমদানি করা ওইসব আড়িপাতা ও নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘনের সরঞ্জামাদি কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে? এসব সরঞ্জাম বিরোধী জনমতকে দমন করার কাজে ব্যবহার করে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, এই আমদানির ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নাম ব্যবহারের সরকারি ব্যাখ্যা জাতিসংঘ নাকচ করায় শান্তিরক্ষা মিশনের ওই দায়িত্বে দেশের সংশ্নিষ্টতাই এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।