ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ভারতের আভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ। তিস্তাসহ বাংলাদেশ-ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন চুক্তির অগ্রগতির জন্য ভারত দৃঢ়ভাবে কাজ করছে। 

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভেতরে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। কারণ এই দুই প্রতিবেশী দেশের গভীর বন্ধুত্ব ঐতিহাসিকভাবে পরীক্ষিত। 

ভারত সবসময়ই পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের নীতিতে বিশ্বাস করে, কখনই দাদাগিরি করে না।সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। ডিক্যাব সভাপতি পান্থ রহমানের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক একেএম মইনুদ্দিন। 

অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সদস্যসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত কূটনৈতিক প্রতিবেদকরা অংশ নেন।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতেও দুই দেশ কাজ করছে। 

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি গণহত্যার বিচার যেকোনো সময় হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।ভারতীয় হাইকমিশনার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ভেতরে কয়েকটি ক্ষেত্রে অমীমাংসিত ইস্যু আছে। 

এগুলো দীর্ঘদিন ধরে সমাধানের অপেক্ষায় আছে। দুই দেশ এসব ইস্যু সমাধানের জন্য কাজ করছে। এ কারণে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের মধ্যে কখনই সন্দেহ থাকা উচিত নয়। বরং সন্দেহ থেকে বের হয়ে এসে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করলে দু’দেশের জনগণই উপকৃত হবে। ভারত সবসময়ই চায় বাংলাদেশের অগ্রগতি হোক। 

বাংলাদেশ অসফল হোক, এটা ভারত কখনই চায় না।বাংলাদেশকে করোনাভাইরাস টিকা দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতে যখনই টিকা উৎপাদন হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে তা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্যও সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে ভারত ও বাংলাদেশের জনগণ একইসঙ্গে টিকা পেয়েছে। এটাই প্রমাণ করে ভারতের প্রতিবেশী নীতিতে বাংলাদেশই সবার আগে।তিনি বলেন, ভারতের মৌলিক স্বার্থের একটি হচ্ছে শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক ভারতের পররাষ্ট্রনীতির একটি বড় অগ্রাধিকার। এ সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কোন মাত্রায় তাতে ভারতের কিছু আসে যায় না। কারণ অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে অনুমান করা হাইকমিশনার হিসেবে তার কাজ নয়। 

তিনি বাংলাদেশ এসেছেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগামী মার্চের ঢাকা সফর সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর বন্ধুত্ব সুসংহত করা এবং আরও অনেক দূর এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যই হবে এ সফরের অগ্রাধিকার। 

আগামী মার্চে দুই শীর্ষ নেতার আলোচনায় ঐতিহাসিক উপাদান, দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা যেমন জ্বালানি ও উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়গুলোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় যৌথ স্বার্থ ও ইস্যুগুলোর পর্যালোচনা হবে।তিস্তা চুক্তি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ চুক্তির বিষয়টি ভারতের আভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ। কারণ যেকোনো ধরনের আন্তঃনদী চুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। 

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এর সঙ্গে জড়িত সবার সঙ্গে আলোচনা করছে। এরই মধ্যে দু’দেশের যৌথ নদী কমিশনের টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক হয়েছে। 

এই বৈঠকে অভিন্ন ছয়টি নদীর তথ্য-উপাত্ত বিনিময় হয়েছে এবং এই তথ্য সমন্বয় হওয়ার পরে চুক্তির বিষয়ে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হতে পারব। 

যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক কাছকাছি সময়ে হবে। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন চুক্তির জন্য ভারত দৃঢ়ভাবে কাজ করছে।