রূপাতলী বাস টাার্মিনাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব দেড় কিলোমিটার। এই দেড় কিলোমিটারের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। 

শনিবার সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা রূপাতলী বাস টার্মিনালে এবং শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করছেন। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন তারা। এতে বরিশালসহ সারাদেশের সঙ্গে সড়কপথে ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা এবং ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও খুলনা জেলার সঙ্গে বরিশালের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। 

এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের মানুষ।গত মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে নগরীর রূপাতলীস্থ বিআরটিসি কাউন্টারের স্টাফের কথা কাটাকাটি হয়। তুচ্ছ ওই ঘটনায় কাউন্টার স্টাফ রফিক ২ শিক্ষার্থীকে লাঞ্চিত করে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক অবরোধ করে এবং রফিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। ওই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার গভীর রাতে রূপাতলী এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেসে গিয়ে নৃশংস হামলার অভিযোগ ওঠে বাস শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে বুধবার দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। 

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা বিকেলে সড়ক অবরোধ স্থগিত করে। তবে ৪৮ ঘণ্টায়ও দাবি পূরণ না হওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে শনিবার সকাল থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।এদিকে শুক্রবার গভীর রাতে দুই পরিবহন শ্রমিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে শনিবার সকালে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাও টার্মিনাল সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন।শনিবার বেলা ১২টার দিকে রূপাতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত শ্রমিক লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। 

সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ারে পুড়িয়ে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। একই অবস্থা দেড় কিলোমিটার দূরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। লাঠিসোটা হাতে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান করছেন। উভয় স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ রূপাতলী টার্মিনালে প্রবেশের এক কিলোমিটার আগ থেকে সব ধরনের যানবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওর হামলার অভিযোগে হওয়া মামলায় পুলিশ শুক্রবার রাতে নিরীহ দুই পরিবহন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত মালিক-শ্রমিকরা বাস চালাবেন না। 

একই কথা জানিয়েছেন বরিশাল বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মোল্লাও।শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম অমিত হাসান রক্তিম বলেন, মঙ্গলবার রাতে রূপাতলী আবাসিক এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের গণহারে মারধরের নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পদক ও বাস মালিক নেতা কাওছার হোমেন শিপন, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী তেল ব্যবসায়ী মামুন মিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আসামি না করে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে মামলা দায়ের করেছে। ওই তিনজনের নাম উল্লেখ করে পুনরায় মামলা দায়েরসহ ৩ দফা দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা আবারও সড়ক অবরোধ শুরু করেছেন। 

শিক্ষার্থীরা ববি কর্তৃপক্ষের 'নতজানু নীতি' প্রত্যাখান করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ রাখবেন।রূপাতলীতে বাস টার্মিনালে উপস্থিত বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করেনি। 

পুলিশ সন্দেহজনক আসামি হিসেবে শুক্রবার রাতে রূপাতলী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এমকে পরিবহনের সুপারভাইজার আবুল বাশার রনি (২৫) ও সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের হেলপার মো. ফিরোজকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।ওসি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু মামলার এজাহারে কারো নাম নেই তাই পুলিশ তদন্ত ছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।