শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর শুধুমাত্র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, বাকিরা সপ্তাহে একদিন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস করবে।রোববার সংসদে পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের বিধান করতে বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাসের প্রক্রিয়ার সময় এ কথা বলেন তিনি।মন্ত্রী বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির নিয়মিত ক্লাস হবে। 

অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে আসবে। পুরো সপ্তাহের পড়া নিয়ে যাবে। পরের সপ্তাহে আবার একদিন আসবে।তিনি আরও বলেন, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসানো সম্ভব হয় না। তাই সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক সঙ্গে না এনে আলাদা আলাদা দিন ক্লাসে আনার ব্যবস্থা হবে।উল্লেখ্য, টানা ১১ মাস ধরে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত দেশের সাড়ে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী ঘরবন্দি। করোনার টিকা আসায় অবশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা।পরে শনিবার থেকে স্কুল-কলেজে শুরু হয়েছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। 

বন্ধ থাকা ক্লাসরুম, ধুলা পড়া ব্ল্যাকবোর্ড আর প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতির খবরে ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। তারা দ্রুত ক্লাসে ফিরতে চায়। তবে একসঙ্গে নয়, ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে খুলে দিলে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য গ্রামাঞ্চলে ও করোনায় অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত জেলা, উপজেলাগুলোর স্কুল-কলেজ আগে খুলে দিতে হবে। 

তাদের অভিমত, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একটু পরে খোলা যুক্তিসংগত হবে।গত শুক্রবার রাতে সারাদেশের স্কুল-কলেজপ্রধানদের কাছে মাউশির পাঠানো নির্দেশনায় আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্কুল-কলেজ খোলার জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে একটি গাইড লাইনও দেওয়া হয় এ নোটিশের সঙ্গে।গাউড লাইনে বলা হয়, তিন ফুট দূরত্বে ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলো স্থাপন করতে হবে। 

পাঁচ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের একটি বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী এবং পাঁচ থেকে সাত ফুট দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে দু'জন শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাইড লাইন অনুসারে ক্লাস করতে পারবে। স্কুলে ঢোকার আগেই থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।কভিড-১৯ বিস্তার রোধে প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় সবার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। 

সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষার্থীরা যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলাফেরা করতে পারে এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থারও পরিকল্পনা নিতে হবে। 

দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে তা থেকে মুক্ত করার জন্য নিরাপদ ও আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের পরিকল্পনা নেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।