কৃষকের কথা বিবেচনা করে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক বসাতে চায় কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

তবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির জন্য খোলা ঋণপত্রের আওতায় আনা পেঁয়াজ শুল্কের আওতার বাইরে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।রোববার বিকেলে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে শুল্ক আরোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। 

বৈঠক শেষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনআরবি) কাছে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একটি সূত্র জানায়, আগের মতো ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।পেঁয়াজের নতুন মৌসুম শুরু হলে ভারত এতদিন ধরে চলতে থাকা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা গত সপ্তাহে তুলে নেয়। 

গত দু'দিন ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসাও শুরু হয়। আমদানির প্রভাব দেশের বাজারেও পড়তে শুরু করে। মোকামগুলোতে প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজের দাম ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে ২১ থেকে ২৪ টাকা কেজি দরে ভারত থেকে আসছে পেঁয়াজ। হিলি স্থলবন্দরে  রোববার পাইকারি দর ছিল ২৭ থেকে ৩০ টাকা। 

অন্যদিকে রাজধানীর বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও আমদানি পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে দ্রুত দাম কমে যাওয়ায় প্রেক্ষাপটে মৌসুমের এ সময় কৃষকের ন্যায্য দর পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টি সামনে চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে রোববার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দেন। 

পরে বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে বসেন সংশ্নিষ্টরা।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, বৈঠকে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক আরোপের বিষয়ে সিদ্ধান্তের পর এনবিআরকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শুল্কের হার আগে যেটা ছিল সেটা বিবেচনা করতে পারে এনবিআর।

তিনি আরও জানান, প্রস্তাবে প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে শুল্ক কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। তবে যেসব ব্যবসায়ী আগে এলসি খুলেছেন তারা শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাবেন। এ ছাড়া বৈঠকে পেঁয়াজ উৎপাদনের বিষয়াদি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।আন্তঃমন্ত্রণালয় এ বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে কখনও পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে, কখনও খুলে দেয়। এখন তারা খুলে দিয়েছে। আমরা আমাদের কৃষকের স্বার্থটা আগে দেখব। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও দেখব। 

আমাদের আশা, আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো।টিপু মুনশি আরও বলেন, সবার আগে কৃষকের ক্ষতির বিষয়টি ভাবতে হবে। তারা যেন মার না খান, তা ভেবে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাদের সহায়তা না দিলে আমাদের খারাপ অবস্থা হবে। 

এখন বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করা মজুদের পাশাপাশি পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজ রয়েছে। টিসিবির আমদানি করা দেড় লাখ টন পেঁয়াজও বাজারে আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের সংকটের কারণে আমদানি হবে এমনটা নয়, নিয়মিত আমদানি হয়। 

আমাদের দেশে এ মুহূর্তে যে পরিমাণ পেঁয়াজ ভারত বাদে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে, পাশাপাশি মুরি কাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে তাতে কোনো সমস্যা নেই। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে। সে পর্যন্ত কোনো সমস্যা হবে না। 

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে আমদানি করা হবে।মৌসুমের সময় আমদানি করলে কৃষক দাম পাবেন না উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়ে ১৮ টাকা। 

তা যদি ২৫ টাকা দরে বিক্রি না হয় তাহলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। তিনি আরও বলেন, দেশে সাধারণত ঘাটতি থাকে আট থেকে নয় লাখ টন। গত বছর উৎপাদন এক লাখ টন বেড়েছে। এ বছর তিন লাখ টন বাড়বে।