কুড়িগ্রামে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি করে রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট সদর ইউপিতে একজনকে গ্রাম পুলিশে (মহল্লাদার) নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ফলে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জানা যায়, রাজারহাট সদর ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ (মহল্লাদার) পদে অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮’র নিচে) এক কিশোরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। 

২নং ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বাবুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের সুপারিশের ভিত্তিতে গ্রাম পুলিশ (মহল্লাদার) পদ থেকে অভিযুক্ত কিশোর গৌতম রায়কে বরখাস্ত করে উপজেলা প্রশাসন। গত ১৭ জানুয়ারি রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে তাসনিম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। 

আদেশটি উপজেলা প্রশাসনের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রাজারহাট ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে গ্রাম পুলিশ (মহল্লাদার) পদ শূন্য হলে ওই পদে ২০২০ সালের জুলাই মাসে গৌতম রায় নামে এক কিশোরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু গৌতম রায় নামে ওই এলাকায় কোনও ব্যক্তি নেই জানিয়ে ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বাবু অভিযোগ করেন। তিনি উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন। 

অভিযোগে তিনি জানান, নিয়োগ পাওয়া গৌতম রায় মূলত ওই ওয়ার্ডের নির্মল কুমার রায়ের ছেলে নিপ্পন কুমার রায় (১৭)। নিপ্পন কুমারের ১৮ বছর বয়স পূর্ণ না হওয়ায় রাজারহাট ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক তার নাম ও জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে চাকরি পাইয়ে দিতে অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ এবং ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে আবেদন করার পরামর্শ দেন। 

সে অনুযায়ী নিপ্পন কুমারের নাম পরিবর্তন করে গৌতম রায় এবং জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৬ দেখিয়ে আবেদন করা হয়। এরপর তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভুয়া সনদে তাকে গ্রাম পুলিশে চাকুরি দেয়া হয়। এসএসসি পাসের সনদ অনুযায়ী নিয়োগকৃতের নাম নিপ্পন কুমার রায় এবং জন্ম তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সাল। উপজেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আদেশে বলা হয়, গৌতম রায়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩ (খ) ও (ঘ) ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে  সরকারি কর্মচারী ( শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা,২০১৮ এর ৪ (৩) (ঘ) ধারায় চাকরি থেকে কেন বরখাস্ত করা হবে না মর্মে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। 

ওই সময়ে অভিযুক্ত কিশোর গৌতম রায় কারণ দর্শানোর নোটিশের লিখিত কোনও জবাব দেননি। পরে সরকারি কর্মচারী ( শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪ (৩) (ঘ) ধারায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর হবে বলেও অফিস আদেশে বলা হয়েছে। এই দুর্নীতি করে দেওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হকের শাস্তি দাবি করেছেন অভিযোগকারী ইউপি সদস্য। 

তিনি বলেন,‘গ্রাম পুলিশের এ নিয়োগে কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যান তাকে চাকরি দেন। ইউপি চেয়ারম্যান ও তৎকালীন ইউএনও মিলে জালিয়াতির মাধ্যমে এ নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়। শুধু নিয়োগ বাতিল করলেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না।' নিয়োগ প্রক্রিয়ায় টাকা নিয়ে যে বাণিজ্য হয়েছে সেজন্য ইউপি চেয়ারম্যানের বিচার দাবি করেন তিনি।এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তার নিয়োগে কোনো জালিয়াতি হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। একজন মানুষের দুটি নাম থাকতে পারে। 

এ কথা বলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। তবে তিনি বলেন, তার চাকরি চলে গেলে শুনেছি সে হাইকোর্টে যাবে। এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম বলেন, ওই গ্রাম পুলিশের জালিয়াতির বিষয়টি কাগজে কলমে সঠিকতা পেয়েই তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তাকে ইতোমধ্যেই বরখাস্তের চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। নতুন করে চাকরিতে থাকার আর তার সুযোগ নেই। তবে চেয়ারম্যানের জোগসাজশে হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।