সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো  মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)।  বেশকিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে রোববার দুপুরে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৭৫ বছর বয়সে মারা যান তিনি।খালেদুর রহমান টিটোর বড় ছেলে মাশুক হাসান জয় জানান, কিছুদিন ধরে তার বাবা অসুস্থ ছিলেন। 

গত বৃহস্পতিবার তাকে যশোর সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে তিনি মারা যান।তিনি আরও জানান, হাসপাতাল থেকে মরদেহ শহরের ভোলাট্যাংক রোডস্থ বাসভবনে নেওয়া হয়েছে। সোমবার জোহরবাদ তার জানাজা হবে।পারিবারিক সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরেই সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালেদুর রহমান টিটো অসুস্থ ছিলেন। 

গত ১৯ নভেম্বর তিনি নিজ বাস ভবনে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরদিন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর ধরা পড়ে, তার ফুসফুসে পানি জমেছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার পর তার অবস্থার উন্নতি হয়। 

পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর বাড়িতেই তার চিকিৎসা চলছিল।কয়েকদিন আগে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সেখান থেকে তাকে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে আইসিইউতে ছিলেন। 

মৃত্যুকালে তিনি তিন ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাক্সক্ষী ও কর্মী, সমর্থক রেখে গেছেন।বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ খালেদুর রহমান টিটো ১৯৪৫ সালের ১ মার্চ কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রয়াত অ্যাডভোকেট হবিবুর রহমান। মামরহুম করিমা খাতুন। সাত ভাইবোনের মধ্যে টিটো দ্বিতীয় ছিলেন। বড় ভাই মাসুকুর রহমান তোজো যশোরের একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি শহীদ হন।খালেদুর রহমান টিটো রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। ১৯৬৩ সালে যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়নে সম্পৃক্ততার মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। 

১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করেন।১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী-ন্যাপ) এ যোগদান করেন। ৭৪ সালেই ন্যাপের জেলা সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৭৭ সালে ন্যাপের যশোর অঞ্চলের সভাপতি প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আলমগীর সিদ্দিকী মারা গেলে তিনি ন্যাপের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। 

৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তিনি ন্যাপের পক্ষ থেকে তাকে সমর্থন করেন। নির্বাচনের পর বিএনপি গঠিত হলে তিনি ন্যাপের সাথেই থেকে যান। ১৯৮১ সালে ‘গণতান্ত্রিক পার্টি’ গঠিত হলে তিনি এই রাজনৈতিক দলের সথে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে পৌরসভার নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে জাতীয় পার্টি গঠিত হওয়ার পর ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি পক্ষ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। 

১৯৯০ সালের মে মাসে তিনি শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।সরকার পতনের ফলে ১৯৯১ সালে তাকে জেলে যেতে হয়। এ সময় তিনি জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯১ সালে দলকে নতুনভাবে সাজানো হলে তিনি কারাগারে থাকাকালীন কৃষি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৯১’র  শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব হন এবং ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। 

পরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি মনোননয়ন না পাওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। পরে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন।২০০৬ সালে খালেদুর রহমান টিটো আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। 

২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী, যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটোর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন যশোর ৩ আসনের সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদ, শেখ আফিল উদ্দিন, শাহিন চাকলাদার, এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।